ছবি সংগৃহীত
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করলেই ছাত্রদের গণজোয়ার বন্ধ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেন, ‘দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ গণজোয়ার, গণ-আন্দোলনে অংশ নেওয়া সিংহভাগ মানুষের কোনো দলীয় পরিচয় নেই। আন্দোলনে জীবন দেওয়া ৮৭ শতাংশ মানুষের কোনো দলীয় পরিচয় পাওয়া যায়নি। আন্দোলনের স্পট থেকে কোনো জামায়াত-শিবির আটক হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাজধানীর তোপখানা রোডে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দেশের মধ্যে ছাত্রদের যে আন্দোলন চলছে সেটা যৌক্তিক, শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সরকার পেটোয়া বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মাঝে গুলি ছুড়েছে। আকাশ থেকে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে টিয়ারসেল ও গুলি করেছে। দুই শতাধিকের বেশি নিরীহ মানুষকে মারা হলো, যে তালিকা আরও বেশি। আহতদের ওপরও হাসপাতালে হামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আজ সামরিক বাহিনীকে কলুষিত করার চেষ্টা হচ্ছে, অথচ এখনো সামরিক বাহিনীকে মানুষ শ্রদ্ধা করে। আগে কি দেখেছেন কারফিউ হলে রাস্তায় মানুষ নেমে পড়ে?
মান্না আরও বলেন, ‘‘হাইকোর্ট এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে পুলিশ গালি দিয়েছে, ‘তোরা রাজাকার’ বলে ছাত্রদের পাকিস্তানে চলে যেতে বলেছে। পুলিশ কি এভাবে বলতে পারে? আজ জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার কথা বলা হচ্ছে, যেকোনো সময় নিষিদ্ধ হতেও পারে। কিন্তু স্পটে কোনো একজন শিবির বা জামায়াতকে আপনারা আটক করতে পেরেছেন? পারেননি, কারণ আন্দোলন যারা করছে তাদের কোনো দলীয় পরিচয় নেই। যারা নিহত হয়েছেন তাদের ৮৭ শতাংশ মানুষ কোনো দলের সঙ্গে জড়িত না। তাহলে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করলেই কি আন্দোলন থেকে যাবে? এটা থামবে না। তবে অনেকটাই থেমে যাবে যদি সরকার পদত্যাগ করে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে গুলি করে রক্তাক্ত করা হয়েছে। আহতদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চলেছে। হাসপাতালগুলোয় গোয়েন্দা আর সরকারের পেটোয়া বাহিনীর মহড়া চলেছে। এরপরও আন্দোলন থেমে যায়নি। একটি বিক্ষোভ দমাতে কীভাবে ২০০ ছাত্র হত্যা করা হয়? জাতিসংঘের তদন্ত ছাড়া কোনো তদন্ত আমরা চাই না। সারাদেশে জুলুম-নির্যাতন করা হচ্ছে। এ আন্দোলন এখন শুধু কোটার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সঙ্গে একমত আছি, সংহতি জানাচ্ছি। রাজপথ ছাড়িনি, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের অধিকার ফিরে না আসে ছাড়বো না।
গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতা শহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লুণ্ঠন হয়েছিল, সেটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। হাইকোর্টে আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলেছে পুলিশ। এরা (পুলিশ) কারা? তীব্র নিন্দা জানাই। ঘৃণা জানাতে চাই তাদের বিরুদ্ধে। এ আন্দোলন শুধু কোটা নয়, সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে চলা এ আন্দোলনে আমরা রাজপথে থাকতে চাই।
আরেক নেতা অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো পার্টি না, রাজনৈতিক দল না। এরা খুনি, তারা খুন করছে, সেই খুনকে প্রতিষ্ঠিত করতে মন্ত্রীরা কথা বলছেন। এসব তদন্ত পুলিশি হলে সেটা তাদের ইচ্ছায় হবে। দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, শিশু হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার যেসব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে খুন করেছে। সেসবের তদন্ত হতে হবে।
শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘এটা স্বাধীন দেশ। আমরা যুদ্ধ করে এদেশ এনেছি। তারা হত্যা (করে) আবার রাষ্ট্রীয় শোকও পালন করে। অথচ তারাই বলেছিল দেখামাত্র গুলি করা হবে, সাদ্দাম একাই যথেষ্ট ইত্যাদি।
সাইফুল হক বলেন, ‘‘দেশ স্বাধীনের পরও সবচেয়ে বড় ছাত্র-গণজাগরণ ছিল এটা। দেশব্যাপী ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পালনের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের ঢেউ শুরু হয়েছে। আজ আমরা আমাদের বীরদের স্মরণ করছি। তাদের অহিংস দাবির প্রতি পুরো দেশ সমর্থন দিয়েছে, আমরাও তাদের প্রতি সংহতি জানাই। হত্যার শিকার ৮৭ শতাংশ মানুষের কোনো দলীয় পরিচয় ছিল না। সরকারের মধ্যে গৃহদাহ শুরু হয়েছে। সরকার শেষ দিনগুলো পার করছে। তারা পালিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘‘দেশের জনগণ সরকারকে এক প্রকার বিদায় দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে এক মিনিটের জন্যও থাকতে পারবেন না। রাজপথে গুলির সঙ্গে আকাশপথেও গুলি-টিয়ারশেল মারা প্রমাণ করে তারা ভাড়াটে। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ আন্দোলনে সন্তান গ্রেফতার হচ্ছে, মাকে ‘ভি’ চিহ্ন দেখাচ্ছে, এটা দেশ আগে দেখেনি। আন্দোলনে সাধারণ মানুষের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। একদিন বেশি থাকা মানেই খুন-খারাপি করছে। সমাধানের পথ একটাই, স্বল্প সময়ে পদত্যাগ করলে অনেকটাই সমাধান হবে। সরকার বিদায় না হওয়া পর্যন্ত গণজাগরণ চলবে। সূএ:জাগোনিউজ২৪.কম